নিউজ ডেস্ক: স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম কাতারের সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, পটিয়া ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং দিশারী খেলাঘর আসরের উপদেষ্ঠা মোজাম্মেল হক এরশাদের পিতা মো. রফিক আহমদ (৭৯) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া একটায় পটিয়া নলন্দাস্থ নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বাদে এশা নলান্ধা কাশেমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজার নামাজ শেষে তাকে দাফন করা হয়।
তিনি পটিয়া নলন্দাস্থ মুন্সি মিয়াজীর বাড়ীর মরহুম এজাহার মিয়ার ছেলে। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে যান।
চরকানাই প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে ১৯৬৫ সালে চরকানাই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্টিক পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে এইচ এস.সি, ১৯৬৯ সালে বোয়ালখালী কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে বি.কম, স্বাধীনতাত্তোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রীতে অধ্যয়ন করেন।
ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। তৎকালীন ছাত্র ফেডারেশনের নেতাদের অতি পরিচিত মুখ ও সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর সমসাময়িকের মধ্যে প্রয়াত চৌধুরী হারুনুর রশীদ এমপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মহসীন খান, বোয়ালখালীস্থ উপ পুলিশ কমিশনার কবি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইউনুচ এর নাম উল্লেখযোগ্য।
চেষ্টা, তদবির দৌঁড়ঝাপ না করায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান মেলেনি এ বীরমুক্তিযোদ্ধার। এ মহান বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান না করায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ১৯৭৩ সালে বোয়ালখালীস্থ সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
ছাত্র জীবন থেকে দেশ বিরোধী চক্রান্তে রুখে দাঁড়ান। তাঁহার সমসাময়িক গোবিন্দার খীলের নুরুল ইসলাম চৌধুরী, পশ্চিম গোমদন্ডীর ডা: মান্নান, মনসার চৌধুরী হারুনর রশীদ এম পি, অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী, শেখ মোজাফফর আহমদ, উপ পুলিশ কমিশনার কবি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রফেসর ফয়েজ প্রমুখ।
এছাড়াও তিনি বোয়ালখালীর প্রথম শহীদ এখলাছুর রহমানের ভগ্নিপতি, ছিলেন পটিয়া ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সাথে ছিলেন হামিদ, কাশেম, মহসিন খান প্রমুখ। ৬৯ এর গন অভূথানে স্যার আশুতোষ কলেজে অধ্যয়নকালে ১১ দফা আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা রাখেন তিনি।
পরবর্তীতে ধারাবাহিক আন্দোলন সমূহে যোগ দিয়ে তাঁহার গ্রুপ কমান্ডার অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ৪০/৫০ জন সহযোদ্ধা নিয়ে বান্দরবান পাহাড়ি পথে কাপ্তাই সড়কের পদুয়া হয়ে দোভাষী বাজারে সমবেত হন।জীপ রওয়ানা হয় ইন্জিনিয়ারিং কলেজের উদ্দেশ্যে। গাজ্জালী কলেজ পার হয়ে শক্র পক্ষের আক্রমণের শিকার হলে দিলীপ চৌধুরীসহ কয়েকজন সহযোদ্ধাকে হারিয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেন। এরপর পটিয়ার পূর্ব পাহাড়ে খুরুশিয়ার বাঘাইয়া চাকমার খামার বাড়িতে লাটি আলম ও হাবিলদার ইছহাকের অধীনে গেরিলা ট্রেনিং নেন।পরে এ এফ এম তোজাম্মেল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মিজোরামের দেমাগ্রী ক্যাম্পে যোগ দেন। গ্রামীণ মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে অর্ধাহারে, অনাহারে, কখনো পাগলের বেশে দীর্ঘ পথ চলতে হয়। আইস ফ্যাক্টরি রোডে ও দোস্ত বিল্ডিংয়ে ধরা পড়ে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। ৭৫-এর পর দীর্ঘ সময় জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পাড়ি দেন। সাদাসিধে জীবনধারনকারী এই মুক্তিযোদ্ধা চেষ্টা, তদবির দৌঁড়ঝাপ না করায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবদানের স্বীকৃতি মেলে নি!
Leave a Reply